পিরোজপুরে তিলখেতে মধু চাষ: প্রথমবারেই সাফল্য | Modhupath
পিরোজপুরে তিলখেতে মধু চাষ: প্রথমবারেই সাফল্য
মধুপথ রিপোর্ট | প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৫
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের ঘোষের হাওলা গ্রামে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে তিল ও মধু চাষে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সবুজ গালিচার মতো বিস্তৃত তিল ক্ষেতজুড়ে ফুটে থাকা সাদা ফুল আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত এই মাঠে দেখা যাচ্ছে এক নতুন সম্ভাবনা।
তিল ও মধু চাষের সমন্বিত উদ্যোগ
তিল গাছে ফুল আসতেই মৌমাছির আনাগোনা শুরু হয়। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে সেখানে বসানো হয় মৌচাক। মৌমাছি পরাগায়নের কাজ যেমন করছে, তেমনি সংগ্রহ করছে খাঁটি মধু। ফলে একই জমিতে দুই ধরনের ফসল মিলছে—তিল ও মধু।
১০০ একর জমিতে তিল চাষ
এ গ্রামের প্রায় ১০০ একর জমিতে বারি-৪ জাতের তিল চাষ করা হয়েছে। সেই ক্ষেতেই কৃত্রিম উপায়ে মৌচাষের মাধ্যমে উৎপাদিত হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক মধু। স্থানীয় কৃষকদের এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বরগুনা থেকে আনা হয়েছে পেশাদার মৌচাষি, যারা সুইডেন প্রবাসী আরিফুল ইসলামের বাড়ির পাশে ১৩০টি মৌচাক স্থাপন করেছেন।
কৃষকদের অভিজ্ঞতা
স্থানীয় কৃষক মো. আবুল হাওলাদার জানান, তারা ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে তিল চাষ করছেন। খরচও তুলনামূলক কম; প্রতি বিঘায় ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকা খরচ হয়। সঠিক যত্ন নিলে প্রতি বিঘায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ সম্ভব।
কৃষক মো. শাহজাহান বলেন, "মৌ চাষের কারণে আমাদের ফলন দ্বিগুণ হওয়ার আশা করছি, কেননা মৌমাছির কারণে পরাগায়ন ভালোভাবে হচ্ছে। প্রতিটি গাছেই ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।"
মধু সংগ্রহের সফলতা
মৌচাষি শহিদুল ইসলাম রানা জানান, ১৩০টি মৌ বক্স থেকে প্রথমবারেই ৮ মন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, যার বাজার মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিয়ে মোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তাদের মন্তব্য
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইখতেখারুল আলম বলেন, "দফায় দফায় মিটিং করে ১০০ একর জমিতে বারি-৪ জাতের তিল চাষে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করেছি। তিল লাভজনক ফসল। তিল চাষকে কেন্দ্র করে মধু চাষ করা হয়েছে।"
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "একইসঙ্গে ১০০ একর জমিতে তিল চাষ ও ১৩০টি মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। এতে কৃষকরা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভবান হবেন। পাশাপাশি আশা করছি, তিল চাষে এই মাঠ থেকে কৃষকরা ৪ লাখ টাকা লাভবান হবেন।"
উপসংহার
পিরোজপুরে তিল ও মধু চাষের এই যৌথ উদ্যোগ শুধু কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করছে না, বরং স্থানীয় পর্যায়ে কৃষির নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় এই প্রকল্প আরও প্রসারিত হলে ভবিষ্যতে এটি জাতীয় পর্যায়ে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।