দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যাতে দূরত্ব না হয় | Modhupath

দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যাতে দূরত্ব না হয়
দল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যাতে দূরত্ব না হয়

প্রকাশকাল: ২৫ মে ২০২৫ | লেখক: মধুপথ রিপোর্ট

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে সবাই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁরা এ–ও বলেছেন, রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের যাতে দূরত্ব তৈরি না হয়, সে জন্য সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

রোববার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় দুই দফায় বিভিন্ন দল ও সংগঠনের ১৯ নেতা বৈঠক করেন। পরে রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশের ভেতরে ও বাইরে।

বিকেলে প্রথম দফায় বৈঠকে অংশ নেন ১০ জন রাজনৈতিক নেতা। তাঁরা হলেন এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু), ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, মুক্তিযুদ্ধ ও দুর্যোগবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ও ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

এর আগে শনিবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে তিন দলই নিজেদের আগের অবস্থান তুলে ধরেছে।

প্রথম দফায় বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য দূরত্বের বিষয়টি তুলেছেন কেউ কেউ। কেন এমন দূরত্ব তৈরি হবে, সেই প্রশ্ন তোলেন একজন নেতা। দূরত্ব কমাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের নিয়মিত আলাপ-আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন নেতাদের অনেকে।

কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সরকারের কোনো কোনো মহল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চায়। সংবেদনশীল বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন অনেকে। দুই ছাত্র উপদেষ্টার সরকারে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিভিন্ন দলের নেতারা। সবাই অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি সমর্থনের কথাও জানান।

‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্র’

সংবাদ ব্রিফিংয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অধ্যাপক ইউনূস আলোচনা শুরু করেছেন এ কথা বলে যে আমরা অনেক বড় সংকটের মধ্যে আছি। এ সংকট বলতে তিনি প্রধানত ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, “ভারত আমাদের পরিবর্তন চায় না, পারলে ধ্বংস করে দিতে চায়।” তাই সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন ইউনূস।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না আরও বলেন, ‘সমগ্র জাতি চায় না ইউনূস বিদায় নিক। বরং তাঁকে আরও সক্রিয় হতে হবে, রোডম্যাপ দিতে হবে।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করতে হবে। স্থানীয় নির্বাচন এখন অগ্রাধিকার নয়।’

তিনি বলেন, ‘গণহত্যাকারীদের বিচার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কাজ শেষ না করে অধ্যাপক ইউনূসকে বিদায় নেওয়া যাবে না।’

নির্বাচন নিয়ে মতভেদ

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংস্কার দরকার।

সাইফুল হক বলেন, সরকারের দলনিরপেক্ষ বৈশিষ্ট্য অনেক ক্ষেত্রে বজায় থাকছে না।

এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, নির্বাচন ডিসেম্বর না জুনে—এ বিতর্ক সমঝোতায় মেটাতে হবে।

দ্বিতীয় দফার বৈঠকে ইসলামি দলগুলো

হিসাবে অংশ নেন: রেজাউল করীম (ইসলামী আন্দোলন), মামুনুল হক, নুরুল হক নুরসহ আরও অনেকে।

তাঁরা জানান, ইউনূসকে মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে পূর্ণ সমর্থন দেবেন। মামুনুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন সহযোগিতা পেলে তিনি সফলভাবে নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব ছাড়বেন।

বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানোর আহ্বান

নুরুল হক বলেন, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরানো সরকারের জন্য ভালো হবে।

তিনি আরও বলেন, সামরিক বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে।

প্রেস সচিবের মন্তব্য

প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে সরকার কাজ করছে এবং প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “৩০ জুনের পর নির্বাচন যাবে না।”


ক্যাটাগরি: জাতীয়, রাজনীতি, নির্বাচন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url